বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও? সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে সুবিধাবঞ্চিত অনগ্রসর পরিবার থেকে আসা অনাথ শিশুর খালেদের উত্তর হয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার হব। পরক্ষণেই হাত উঁচিয়ে ফেরদৌস বলল স্যার আমি ইসলামিক স্কলার হব। ‘আর তুমি?’ জিজ্ঞেস করতেই শামীম উত্তর দিল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই। অথচ কদিন আগেও যাদের জীবন ছিল ধূসর, বিবর্ণ। আর ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন।

সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় এবং অভিভাবকহীন শিশুরা বিনা খরচে পড়বে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। চার হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জীবন মূল্যবোধ এবং সম্মানের সঙ্গে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সাভারের আশুলিয়ার ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে গড়ে উঠেছে ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সস (ডিআইএসএস)। সেখানেই  (৭ ডিসেম্বর) সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু কথা বলছিলেন ফেরদৌস, আহাদ, শামীম, খালেদদের মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে। তিনি একে  একে প্রত্যেকটি শিশুর বাড়ী-ঘরের খোঁজ নিয়েছেন, হাসিমুখে কথা বলেছেন, তাদের সাথে বেশ খানিকটা সময় গল্প করে কাটিয়েছেন।  দিনটি তাই তাদের জন্য ছিল অন্যরকম।

গোটা প্রতিষ্ঠান ঘুরে শিশুদের উন্নত ক্লাসরুম, শিক্ষক, গাইড, জীবনযাপন লেখাপড়া, খাবারদাবারের মান প্রত্যক্ষ করে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানালেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। বললেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান একদিন বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশুদের বাতিঘর হিসেবে পথ দেখাবে।’ সমাজের বিত্তবানরা এমন প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে এলে এদেশে ভবিষ্যতে আর কোনো পথশিশু খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

ভারতের ওড়িশ্যার লোকসভার সদস্য ড. অচ্ছুত সামন্তের প্রতিষ্ঠিত খ্যাতনামা কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের (কওঝঝ) আদলে  ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সস (উওঝঝ) গড়ে তুলেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এইউএপি) সভাপতি ড. মো. সবুর খান।

তিনি বলেন, ‘আধুনিকভাবে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছর নির্মিত হবে ড্যাফোডিল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজে অধ্যায়নের সময়েই উচ্চশিক্ষার জন্য কেবল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিই নয়, তাদের জন্য কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াাল টেকনোলজির (কেআইআইটি) দুয়ার খুলে দিয়েছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার আইকন অব ওড়িষ্যার বিষ্ময় বালক,  সর্বভারতে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টিকারী ড. অচ্ছুত সামন্ত।’

ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘আমরা ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় যাত্রা শুরু করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিবছর ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ১০ থেকে ১৫ জনকে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াাল টেকনোলজিতে নিখরচায় থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন ড. অচ্ছুত সামন্ত। আমাদের এই প্রকল্প চালুর মাধ্যমে, সুশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’

ডিআইএসএস প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর  হোসেন বলেন, ‘আমাদের  স্লোগান, প্রতিটি শিশুর জীবন হোক আলোকিত– তাদেরও আছে অধিকার, জীবন গড়ার। জাহাঙ্গীর হোসেন আরো বলেন, ‘এখানে কেজি থেকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ থাকবে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত। বলতে পারেন কেজি টু পিজি। 

কেবল লেখাপড়াই নয়, ডিআইএসএসের সব ছাত্রছাত্রীর জন্য থাকা, খাওয়া, বিনোদন, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেব সবকিছুই ফ্রি। কম্পিউটার ল্যাব, কনফারেন্স ল্যাব, ওয়াইফাই সিস্টেম কোনো কিছুরই অভাব নেই এখানে। একটু সহযোগিতা আর সত্যিকার ভালোবাসা নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ালে তারা দেশকে কতটা বদলে দিতে পারে, সেটাই বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধপরিকর ডিআইএসএস।’

Search