diss1

 মোহাম্মদ জাহাংগীর হোসেন।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছায়াঘেরা এক সুন্দও নৈসর্গিক প্রকৃতির মধ্যে গড়ে উঠেছে আশ্রয়হীন শিশুদের এক নিরাপদ ঠিকানা। এর নাম ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউ অব সোশ্যাল সায়েন্সেস। সংক্ষেপে ডিআইএসএস। ড্যাফোডিল পরিবারের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থে এবং মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।

ডিআইএসএস চরম ঝুঁকিতে থাকা সমাজের নিরাশ্রয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সেবা প্রদানকারী সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। শিশুদের দক্ষ জনশক্তি ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য গতানুগতিক দাতা সংস্থা নির্ভরতা সম্পুর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিআইএসএস ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে পথশিশুদের অধিকার সুরক্ষায় কর্মরত ছিলেন এমন দক্ষ, প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়ে সেবা নিশ্চিতকরনের জন্য কাজ শুরু করেছে।

ডিআইএসএস-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা, বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা, কর্মমূখী ও জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা এবং শিশুদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা যাতে করে তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে, আশ্রয়হীন শিশুদের যদি পূনর্বাসন করা না যায়, তবে তারা সমাজের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সাথে যুক্ত হবার সম্ভাবনা থাকবে এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ণে বাঁধাগ্রস্থ হবে।

সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে “ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন”এর মাধ্যমে দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিকাশ, আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা, ভরণ-পোষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে “ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সাইন্সেস বা ডিআইএসএস” গড়ে তোলা হয়েছে।

ভারতের উড়িষ্যার বিখ্যাত কালিঙ্গ ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সাইন্সেস-কেআইএসএস ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের লোকসভার সংসদ সদস্য ড. অচ্ছ্যূত সামন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০ হাজার সুবিধাবঞ্চিত উপজাতি শিশু নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারই ব্যক্তিগত আগ্রহে কেআইএসএসকে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করেই বাংলাদেশে “ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সাইন্সেস- ডিআইএসএস গড়ে তোলার জন্য ২০১৮ এর ১১ জানুয়ারিতে এক সমঝোতা সাক্ষরিত হয়।

সেই সমঝোতা অনুসারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিরর সহযোগিতায় ডিআইএসএস-এর সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা তাদের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করতে পারবে। ডিআইএসএস পর্যায়ক্রমে চার হাজার শিশু এখানে অন্তবর্তীকালীণ সময়ের জন্য সকল প্রকার সুবিধার আওতায় আসবে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর জীবন এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে সে সমাজ ও পরিবারে ফিরে গিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে জাতীয়ভাবে অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

শিশু ভর্তির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়:

– পিতামাতার খোজ নেই কিংবা উভয়ে মৃত, আত্মীয়স্বজনের খবর নেই ফলে আশ্রয়হীন
– পিতামাতা উভয়ে পৃথকভাবে বসবাস করায় শিশুটির দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না
– পিতার সম্পূর্ণভাবে অক্ষম, মাতা অন্যত্র চলে গেছেন ফলে শিশুটি চরম ঝুকিতে আছে
– হারিয়ে যাওয়া আশ্রয়বিহীন পথশিশু
– অন্য শিশুহোমের আশ্রয়ে থাকা শিশু সুযোগ সুবিধার অভাবে শিশুর বিকশিত হতে পারছে না তাদেরকেও কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনায় ডিআইএসএস -এ ভর্তি করা যাবে।
– উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে শিশুর বয়স ৫-১০ বছর এবং ছেলে ও মেয়েশিশু উভয়েই সম সুযোগ পাবে;

জাতীয় শিশু নীতিমালা, শিশু অধিকার সনদ, শিশু আইন, সংবিধান এবং জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

এসব আইন ও বিধান বিবেচনায় রেখে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সাইন্সেস মূলত গড়ে উঠছে আশ্রয়হীন শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্যে। এই প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে অনেকে মনে করেন। ডিআইএসএস মনে করে, শিশু তার অভিভাবকের কাছেই নিরাপদ। শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে এমন কাজ থেকে ডিআইএসএস সবসময় বিরত থাকবে।

আর তাই ডিআইএসএস সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য হবে নিরাপদ আবাসন এবং পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য একটি আদর্শ শিশু হোম।

Source : https://lekhapora24.net/2021/09/21/%e0%a6%86%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%9f%e0%a6%b9%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a6/

Search